কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৪-২৫ — একটি প্রতিবেদন

খুব সহজ করে বলা যায়,কেন্দ্রীয় বাজেট হলো আগামী অর্থ বর্ষের কেন্দ্রীয় সরকারের আয় ও ব্যয়ের হিসাব। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেট পেশের শুরুতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত যে ৫ বছরের মধ্যে ৪. ১ কোটি যুবকদের কর্মসংস্থান, দক্ষতা এবং অন্যান্য সুযোগের সুবিধার জন্য ৫টি প্রকল্প এবং উদ্যোগের জন্য ২ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যয় করা হবে।” বিজেপি সাংসদেরা অর্থমন্ত্রীর এই প্রাথমিক বক্তব্যকে টেবিল চাপড়ে স্বাগত জানান। প্রথমেই অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, এবারের বাজেটে ৯টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কৃষি উৎপাদন, কমর্সংস্থান, পরিকাঠামোয় সহ জোর বাজেটে নজর গরিব, যুব, মহিলা ও কৃষকদের উপরে ৷

 

অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন –  ১ কোটি কৃষকদের ন্যাচারল ফার্মিংয়ের অনুমতি

আরও ৫টি রাজ্যে চালু হবে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড: সীতারমণ।

বিকশিত ভারতের জন্য নির্দিষ্ট রোডম্যাপ, কৃষিতে উৎপাদনে জোর

কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিশেষ নজর ৷ দেশের অর্থনীতি এগোচ্ছে, কমছে মুদ্রাস্ফীতি

বিহারের জন্য বিমানবন্দর তৈরির কথা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া ১৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হবে অন্ধ্রপ্রদেশকে।

পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নতির জন্য বিশেষ স্কিমের কথা বললেন নির্মলা।

 

এছাড়াও খুবই ইঙ্গিতবাহী বাজেটের কথা বলেন। তিনি বলেন

সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে বিশেষ যোজনার কথা উল্লেখ করলেন নির্মলা সীতারামন। তিনি উল্লেখ করেন, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে ১ কোটি বাড়িতে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্য পাওয়া যাবে।

বাজেটে ঘোষণা, আবাস যোজনার অধীনে ১ কোটি গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য বাড়ি বানাতে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ।

স্ট্যাম্প ডিউটি কমাতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকে। আর মহিলারা কোনও সম্পত্তি কিনলে সেই খরচ কমাতে হবে আরও।

একটি বিশেষ স্কিম আনা হচ্ছে, যাক অধীনে আগামী ৫ বছরে ৫০০টি বড় সংস্থায় ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন ১ কোটি পড়ুয়া।

 

এর পরেই তাঁর ভাষণে এসেছে বেশ কিছু শুল্ক ছাড়ের কথা।

২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বেশ কিছু জিনিসের উপর শুল্কে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ, চিকিৎসার সরঞ্জাম, এক্স রে মেশিন, মোবাইল ফোন, মোবাইল চার্জারে কমানো হচ্ছে শুল্ক। লিথিয়াম, কপার, কোবাল্টের মতো খনিজ পদার্থে তুলে নেওয়া হচ্ছে শুল্ক। এছাড়াও তিনি বলেন -* বিহারের জন্য বিশেষ ঘোষণা।

গঙ্গায় তৈরি হবে ব্রিজ, হাইওয়ে তৈরির জন্য দেওয়া হচ্ছে ২৬০০০ কোটি, খোলা হবে নতুন মেডিক্যাল কলেজ।

পর্যটন প্রসঙ্গে বিশেষ ঘোষণা করা হল বাজেটে। সেখানেও গুরুত্ব পেল বিহার। এছাড়া ওড়িশার কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে পর্যটনের উন্নতির জন্য আর্থিক সাহায্য করবে সরকার।

বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিহারে বারবার বন্যা হয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ করা হবে ১১,৫০০ কোটি টাকা। অসমেও ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের জন্য দেওয়া হবে অর্থ সাহায্য।”

নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ছে অনেকটা। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। আগামী ৫ বছরেও সেই ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হবে। ১১১১১১১ কোটি টাকা ক্যাপিটাল এক্সপেনিচারে দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ৩.৪ শতাংশ।

প্রতি বছর অধীর আগ্রহ মানুষ প্রতিক্ষা করে কর কাঠামো নিয়ে অর্থ মন্ত্রীর ঘোষণার জন্য। কর কাঠামোতে এসেছে অনেকটা পরিবর্তন। তৃতীয় মোদী সরকারের এটাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট। এই আবহে অধিবেশনের শুরুতেই প্রধনমন্ত্রী মোদী দাবি করেছিন, এই বাজেট তৈরি হয়েছে ২০৪৭ সালকে মাথায় রেখে। কর কাঠামো বদল হয়েছে অনেকটা। করযোগ্য আয় যদি ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়, তাহলে আয়কর শূন্য। ৩ লাখ ১ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করের হার হল ৫ শতাংশ। ৭ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করের হার হল ১০ শতাংশ। ১০ লাখ ১ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করের হার হল ১৫ শতাংশ। ১২ লাখ ১ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করের হার হল ২০ শতাংশ। ১৫ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে আয়করের হার হল ৩০ শতাংশ। নতুন আয়কর নিয়মে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, কর প্রক্রিয়াকে আরও সরল করে তুলতে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে।

আমরা বাজেট পেশের শেষে অধীর আগ্রহে জানতে চাই যে কোন কোন জিনিসের দাম বাড়ছে ও কমছে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পড়ে জানা গেলো –

 

দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে –

১)জৈব ক্ষতিসাধন প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের অন্তঃশুল্ক বৃদ্ধি পেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

২) নির্দিষ্ট কিছু টেলিকম সামগ্রীর উপর কর ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হবে।

৩) ১২ মাসের বেশি শেয়ার ধরে রাখলে ২.৫ শতাংশ বেশি কর দিতে হবে।

 

দাম কমলো –

১) মোবাইল ফোন, মোবাইল চার্জার।

২) সোনা-রুপো এবং প্ল্যাটিনাম।

৩) ক্যানসার চিকিৎসার অত্যাবশ্যকীয় তিনটি ওষুধের উপর বহিঃশুল্ক তুলে দেওয়া হল।

৪) দাম কমছে সৌর প্যানেল নির্মাণে ব্যবহৃত মূল সামগ্রীর।

৫) ই-কমার্সের ক্ষেত্রে টিডিএস।

৬) সস্থা হবে ক্যামেরার লেন্স

৭) সস্থা হচ্ছে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি

৮)বৈদ্যুতিক গাড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *