এক্সিট পোলের সমীক্ষাগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলায় সবুজ আবিরের ঝড় উঠেছে ভোটের ফল প্রকাশের দিন।প্রচারপর্বের শুরু থেকেই প্রকাশ্যে বলে এসেছি বা পোস্ট করেছি, ‘তৃণমূল ৩০ পার’। যাঁরা বিশ্বাস করতে পারেননি, সমস‌্যাটা তাঁদের। ঠিক কোন কোন ফ‌্যাক্টর এতে কাজ করল এবং তৃণমূল ২৯-এ পৌঁছালো, তার বিশ্লেষণও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

১. মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের উন্নয়ন এবং পরের পর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি। একদিকে রাস্তা, জল, আলোর পরিকাঠামো, অন‌্যদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে স্বাস্থ‌্যসাথী। মানুষ পরিষেবা পেয়েছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন। মানুষের ধারণা, এই পরিষেবা অক্ষুণ্ণ রাখতে মুখ‌্যমন্ত্রীর হাত শক্তিশালী করতে হবে। অন‌্য কোনও শক্তি বাড়াবাড়ি করলে এইসব বন্ধ হয়ে যাবে।

২. তৃণমূল কংগ্রেসের বুথভিত্তিক সংগঠন, সর্বস্তরে জনপ্রতিনিধি, লোকবল। অন‌্যদিকে বিজেপির সংগঠনহীনতা শুধু মিডিয়া বা সোশাল মিডিয়ার উপর নির্ভরতা। এলাকায় ভোটকাঠামো না থাকা।

৩. বিজেপি অভ‌্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ঝাঁজরা। নব‌্য এবং আদির গোলমাল প্রায় সর্বত্র। যে গোষ্ঠী এখন ক্ষমতায় তারা ইচ্ছেমতো প্রার্থী দিয়েছে, আসন বদল করেছে। পুরনোদের উপর নতুনরা দাদাগিরি চালিয়েছে। এতে প্রতিটি আসনেই উলটো চোরাস্রোতের খেলা চলেছে। নিট ফল পরের পর আসনে হার।

৪. বিজেপির নেতারা বাংলার বিরুদ্ধে মূলত কুৎসা করেছেন। ব‌্যক্তিগত আক্রমণ। বাংলার উপকার করেননি। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভোটপ্রচারে এলেও স্থানীয় কোনও প্রভাব ছিল না। বিজেপির এই কুৎসা এবং ঔদ্ধত্যের সঙ্গে এজেন্সি-রাজনীতিটা মানুষ প্রত‌্যাখ‌্যান করেছে।

৫.রাজ্যের জেলাভিত্তিক বা অঞ্চলভিত্তিক জনবিন‌্যাস এবং সমস‌্যাগুলির প্রশ্নে একেবারে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ ও প্রচারে গিয়েছে তৃণমূল। তাতে সাড়া মিলেছে। বিজেপির ক্ষেত্রে এর কোনও পরিকল্পনার ছাপ ছিল না।

৬. তৃণমূলকে চাপ দিতে কেন্দ্রের রাষ্ট্রশক্তি ব‌্যবহার, এজেন্সির অপব‌্যবহার, লাগাতার ব‌্যক্তি আক্রমণ ও কুৎসা, আদালতের একাংশের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা– এই গোটা বৃত্তটির জবাবে তৈরি হয়েছে এক আত্মবিশ্বাসী বঙ্গ-অস্মিতা। তার পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছে ভোটে।

এই কারণগুলির উপর দাঁড়িয়ে এবার বাংলায় তৃণমূলের এই বিপুল জয়। এটা শুধু ২০২৪ সালের লোকসভার ফল নয়, এটা যেন ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের একটি ভূমিকার মঞ্চ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *