প্রচন্ড গরমে কি খাওয়া উচিত আর কি খাওয়া উচিত না জেনে নিন বিস্তারিত…….

প্রচন্ড গরমে উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষরা হাঁসফাঁস করেছে। এই গরমের মধ্যে কোন খাবারটি খাওয়া উচিত আর কোন খাবারটি খাওয়া উচিত না সে বিষয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। গরমের সময় মানুষের পক্ষে কোন খাবারটি খেলে শরীর থেকে ঠান্ডা রাখতে পারে আর কোন খাবারটিকে খেলে শরীরকে ব্যস্ত করতে পারে তারই বিষয় জানাবো এখানে -

গরমে কি কি কম খাবেন
এমন কিছু খাবার আছে সেগুলি খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, সেই খাবারগুলো থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।

•মশলাজাতীয় খাবার – বর্তমান দিনের মানুষরা খুব বেশি মশলাদার খাবার খেতে পছন্দ করে। কিন্তু এইসব মশলাদার খাবার এই গরমে খাওয়া এড়াতে হবে। কারণ এই খাবারগুলি হজম করতে বেশি সময় লাগে তাই বিপাকযন্ত্র অনেকক্ষণ ধরে কাজ করে যার ফলে শরীরে তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়

•ডিম – বাঙ্গালীদের খাবারের মধ্যে এক অন্যতম খাবার হলো ডিম। প্রোটিনের ঘাটতি মেটাবার জন্য অনেকেই ডিম খায়। কিন্তু এই গরমে ডিম খেলে শরীরের মধ্যে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, কিংবা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাহলে তারা চাইলে ডিম এড়িয়ে চলতে পারে।

•আইসক্রিম ও কোমল পানীয় – অনেকে মনে করেন, আইসক্রিম ও ঠাণ্ডা বোতলজাত কোমল পানীয় খেলে গরম কম লাগবে। কিন্তু এগুলো খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্যই আইসক্রিম কিংবা কোমল পানীয় খাওয়ার পরপর তৃষ্ণার্ত বোধ করে মানুষ।

•ফাস্টফুড – এখনকার দিনে প্রত্যেকটি বাচ্চাই ফাস্টফুট খেতে খুব পছন্দ করে। কিছু হলেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বার্গার পিজা এইগুলো খেতে তারা প্রচন্ড পছন্দ করে। কিন্তু এগুলো খাবা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শর্করা এবং চর্বি থাকে যা হজম করতে অনেক বেশি সময় লাগে। যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।

  • চা-কফি – বাঙ্গালীদের সকালটা যেন চা-কফি ছাড়া শুরুই হতে চায় না। কিন্তু এই চা কফি শরীরের কতটা ক্ষতি করছে তা মানুষেরা বুঝতে পারে না। শীতকালে শরীরে গরম রাখার জন্য অনেকেই চা খায়। কারণ চা খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় গরমের ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম থাকে। তাই, গরমকালে অতিরিক্ত চা-কফি পান করা উচিৎ নয়। কারণ চা বা কফির ক্যাফেইন দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে।

•দুগ্ধজাতীয় খাবার: গরমকালে দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে সংযত রাখুন কারণ। এই সময় খুব তাড়াতাড়িট এই জাতীয় দ্রব্য এ ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে।

•অতিরিক্ত চিনি ও লবণ: অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। গরমকালে সেটি আরো বেশি ক্ষতি করে। এসময় অতিরিক্ত চিনি ও লবণ খেলে শরীরে অস্বস্তি হতে পারে। তাই, গরমে প্যাকেট জাতীয় খাবার বা প্রসেসড ফুড খাওয়া একদমই উচিৎ না।

গরমকালে যে সব খাবার খাওয়া যেতে পারে

•কম মশলা জাতীয় খাবার- মশলা জাতীয় খাবার খেতে ভালো লাগলো গরমকালে কম মশলাযুক্ত খাবার খেতে হবে তাহলে তার শরীরের পক্ষে কম ক্ষতিকারক হবে।

  • শাক-সবজি – বাজারে এখন ঝিঙ্গা, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, সজনেডাঁটা, শাকের ডাঁটা ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোকে যদি পাতলা ঝোল করে রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে এগুলো একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা জোগাবে, অপরদিকে শরীরে গরম অনুভব করাবে না।
  • নিরাপদ পানি- গরমে নিরাপদ পানি পানের কোনও বিকল্প নেই। কারণ গরমের সময় ঘাম ও প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম বের হয়ে যায়। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার বা ১২ থেকে ১৩ গ্লাস পানি পান করা উচিৎ।
  • ডাবের জল – শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে এবং ইলেকট্রলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে ডাবের জল খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ডাবের যা দাম তার জন্য প্রত্যেকদিন ডাবের জল খাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তারা বিকল্প হিসেবে স্যালাইন পানি খেতে পারেন।
  • লেবু জল – গরমের সময় লেবুর শরবত পান করলে তা শরীরের ক্লান্তি দূর করবে। সেক্ষেত্রে একদম সাধারণ জলে লেবুর রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে যাদের হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ নেই, তারা স্বাদের জন্য সামান্য লবণও ব্যবহার করতে পারেন।
  • ফলমূল- গরমে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য ফলমূল খাওয়া উচিৎ। স্ট্রবেরি, শশা, জাম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তবে বাংলাদেশের বাজারে এই সময়ে তরমুজে ভরপুর থাকে। তাই, গরমের ফল হিসেবে তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। কারণ তরমুজে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জল থাকে।

•টক দই: পাকস্থলীকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন টকদই খাওয়া যেতে পারে। টক দই খালিও খাওয়া যায়, আবার টকদইকে জল দিয়ে গুলিয়েও খাওয়া যায়। অথবা, টক দইয়ের সাথে শশা দিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

•ডিটক্স ওয়াটার: গরমের সময় ভারী খাওয়ার পর ডিটক্স খাবার খাওয়া যেতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার হলো- পানি, লেবুর রস, শশা, গাজর, পুদিনা ইত্যাদির রসের সমন্বয়ে তৈরি একধরনের পানীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *